Bengali essay on autobiography of a pen

কলম হলেও আমার জন্মের একটি ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস খুব গৌরবের নয়। কিন্তু শিক্ষা ও সভ্যতা বিকাশে আমার বংশের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। প্রবাদে আছে, ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’

পরদিন খোকা আমাকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে তার বন্ধুদের দেখালো। সবাই আমাকে নেড়েচেড়ে দেখল। বলল, ‘বেশ দামি কলম, দেখতেও কী সুন্দর!’ খোকা আমাকে খুব যত্নে বুকপকেটে আটকে রেখে রোজ স্কুলে যায়। কতরকম লেখা লেখে। গদ্য-পদ্য প্রশ্নের উত্তর। ইংরেজি, বাংলা, কখনো অঙ্ক বা জ্যামিতি। এভাবে লিখতে লিখতে আমার প্রতি খোকার বেশ মায়া জন্মে গেল। একদিন ক্লাসের এক শিক্ষকও আমাকে ধরে নেড়েচেড়ে লিকে দেখে বেশ প্রশংসা করলেন। খোকাকে বললেন, ‘সাবধানে রেখো, যেন হারিয়ে না যায়।’ 

‘খোকা, এই তো আমি, আমাকে কুড়িয়ে তুলে নাও।’ 

কিন্তু আমার কথা তো খোকার কানে যায় না। একসময় খোকার পায়ের সাথে লাগতেই সে নিচু হয়ে আমাকে তুলে নিল। আনন্দে সে বলে উঠল, ‘স্যার, এই তো আমার কলম।’ দুষ্ট ছেলেটি সাথে সাথে বলে উঠল, ‘স্যার, খোকা নিজের কলম লুকিয়ে শুধু শুধু আমাদের বকা শুনিয়েছে।’ খোকা তখন থতমত খেয়ে, আমতা আমতা করতে লাগল। খোকার অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হলো। 

খোকার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে খোকার মা বাজারের লিস্ট লেখেন আমাকে দিয়ে। বড়বোন রুমানা কখনো আমাকে দিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখে। এভাবে বছর গড়িয়ে খোকার এসএসসি পরীক্ষা এলো। খোকা আমাকে দিয়ে একে একে তার সমস্ত পরীক্ষার উত্তর লিখল। তারপর আমি বেশ কিছুদিন খোকার টেবিলে অলস পড়ে থাকলাম। খোকার পড়ালেখা নেই, আমার ব্যবহারও তাই বন্ধ। 

এসএসসি পরীক্ষায় খোকা খুব ভালো ফল করল। পুরো স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে খোকা। সবাই আনন্দে আত্মহারা। রুমানা বলল ‘খোকা, এটা তোর লাকি পেন। তোর সাফল্যের কিছু কৃতিত্ব এই কলমটাকে দেওয়া উচিত।’ শুনে আমার কী যে আনন্দ হল। 

‘লাকি পেন’ হওয়ার সম্মান। আমি খোকার বুকপকেটে নিত্যসঙ্গী হয়ে ছিলাম। আমার দুঃখে একটি মানুষ যে চোখের জল ফেলেছে এতেই আমি ধন্য।